প্রকাশিত: Fri, Feb 17, 2023 4:30 PM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 1:57 PM

আন্দোলনের পাশাপাশি নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি

আসাদুজ্জামান সম্রাট: ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পতন ও নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনে রয়েছে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্ততিতেও পিছিয়ে নেই দলটি। ইতিমধ্যে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করার কাজ এগিয়ে রেখেছে অনেকটাই। প্রায় ২০০ আসনে দলের প্রার্থী কে হবেন তা অনেকটাই চূড়ান্ত করে রেখেছে দলটি।

বিষয়টি স্বীকার করে দলের স্থ্য়াী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। নির্বাচনের মাধ্যমেই আমরা কয়েকবার সরকার গঠন করেছি। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নির্বাচনের বিকল্প কিছু নেই। আমরা নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেবো, তবে তা হতে হবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে। এ জন্যই আমরা ১০ দফা দাবি আদায়ে মাঠে আছি। আন্দোলন করে তা আদায় করার পর নির্বাচনের বিষয়টি সামনে আসবে।

বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়টি দৃশ্যমান না হলেও প্রতিটি নির্বাচনী এলাকাকেন্দ্রিক আলাদা আলাদা জরিপ এবং প্রার্থী বাছাইয়ের বিষয়ে কাজ করছে দলের একটি উইং। তারা দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আসনওয়ারী প্রার্থী তালিকাসহ এলাকায় জনপ্রিয়তা, দলের সঙ্গে যোগাযোগ এবং গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে রিপোর্ট প্রদান করেছে। বিএনপির নেতারা জানিয়েছেন, আন্দোলনে বিজয় ও নির্বাচনের বিষয়টি সামনে চলে আসলে প্রার্থী বাছাইয়ে দলকে কোনভাবেই বেগ পেতে হবে না।

এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনি মাঠে নেমেছে। ইতিমধ্যেই আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছে মন্ত্রী-এমপিরা। এছাড়াও মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেক নেতারাও মাঠে রয়েছেন। তাদের কার্যক্রম যেভাবে দৃশ্যমান হচ্ছে বিএনপি নেতাদের ঠিক সেভাবে মাঠে দেখা যাচ্ছে না। তারা গুরুত্ব দিচ্ছেন আন্দোলনের উপর। বিএনপির নেতারা মনে করেন, আন্দোলনে সফল হলে নির্বাচনের মাঠে জোয়ার এমনিতেই আসবে। ২০০১ সালের অস্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের উদাহরণ তাদের সামনে রয়েছে।

পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক উপাধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, তারা আন্দোলনকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। আন্দোলন সফল হলে নির্বাচন নিয়ে কোন সমস্যা হবে না। বিএনপির মতো বড়ো দলে প্রার্থী সংকট যেমন নেই, তেমনি প্রস্তুতিরও ঘাটতি নেই। এখন জনসেবা বা গণসংযোগ করে ভোট বাড়ানোর চেয়ে আমাদের আন্দোলনে সফল হওয়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, আমরা যতো সাংগঠনিক কার্যক্রম করছি সবই নির্বাচনের প্রস্তুতির অংশ। আমরা ১০টি বিভাগীয় সমাবেশ করেছি। যাতে বিপুল সংখ্যক লোকের সমাগম হয়েছে। হাজার বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে সমাবেশে অংশ নিয়েছে। সুযোগ পেলে সাধারণ মানুষ আমাদের বিপুল ভোটে নির্বাচিত করবে। কিন্তু তার জন্য প্রয়োজন পরিবেশের। আমরা সেই পরিবেশের জন্যই আন্দোলন করছি।

বিএনপির এই নেতা মনে করেন, দলের প্রস্তুতি যতো ভালোই হোক না কেনো-জনগণ ভোট দিতে না পারলে পরিস্থিতির পরিবর্তন আসবে না। ২০১৮ সালের নির্বাচন থেকে আমাদের শিক্ষা হয়েছে। তিনি জানান, সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সারাদশে প্রায় এক হাজার প্রার্থীর একটি তালিকা রয়েছে। এর বাইরে আরও ভালো কিছু প্রার্থী উঠে এসেছেন। জোটভুক্ত দলগুলোর সঙ্গে আসন ভাগাভাগির বিষয় রয়েছে। এসব বিষয়ে খুব একটা সমস্যা হবে বলে আমার মনে হয় না।

সম্প্রতি দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সব সংসদীয় আসনের নেতাদের মাঠে নামার কথা বলেছেন। একই সঙ্গে কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। কে কী করলো সে বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হবে। আন্দোলন পরবর্তী প্রার্থী মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদের এই ভুমিকার বিষয়টি বিবেচনায় আনা হবে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন,  আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবে না। নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবো না। আমাদের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা আছে, সেভাবে এগুচ্ছি। আমরা আন্দোলনকে আরো গতিশীল করার বিষয়ে ভাবছি, নির্বাচন নিয়ে নয়। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব